আজ ২ অক্টোবর জেনে নিন কিছু বিশেষ মানুষের কথা

            1    *আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস*
                                গান্ধীজী
আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস প্রতিবছর ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে পালিত হয়৷ এছাড়া ভারতে এই দিনটি গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয় ৷
২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্যারিসে ইরানী নোবেল বিজয়ী শিরিন এবাদী তার একজন হিন্দী শিক্ষকের কাছ থেকে দিবসটির ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা গ্রহণ করেন ৷ সিদ্ধান্তটি ধীরে ধীরে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কিছু নেতাদের আকর্ষণ করতে থাকে ৷ ২০০৭ সালে সোনিয়া গান্ধী এবং ডেসমন্ড টিটু জাতিসংঘে সিদ্ধান্তটি পেশ করেন ৷
১৫ জুন ২০০৭, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্যবৃন্দ ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস করার ব্যাপারে ভোট দেন ৷  এরপর সাধারণ পরিষদ তার সদস্যদের কাছে অহিংসার বার্তা দিয়ে ২ অক্টোবর দিবসটি পালনের ব্যাপারে ঘোষণা দেয় ৷"
       2    *অক্ষয়চন্দ্র সরকার তিরোধান দিবস*
                           অক্ষয়চন্দ্র সরকার
অক্ষয়চন্দ্র সরকার (জন্ম: ১১ ডিসেম্বর ১৮৪৬ – মৃত্যু: ২ অক্টোবর ১৯১৭) ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক। রায়বাহাদুরের পুত্র হয়েও ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রবল সমর্থক অক্ষয়চন্দ্র দেশীয় শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও স্বায়ত্তশাসনের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন।
             3 *লাল বাহাদুর শাস্ত্রী* জন্মদিন
                        লাল বাহাদুর শাস্ত্রী
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী(উচ্চারিত [laːl bəˈɦaːd̪ʊr ˈʃaːst̪ri]; শুনুন , ২রা অক্টোবর ১৯০৪  – ১১ ই জানুয়ারি ১৯৬৬) ছিলেন ভারতের ৩য় প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন দলনেতা ছিলেন।
১৯২০ সালে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে তিনি প্রথমে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও পরে জওহরলাল নেহ্‌রুর একজন বিশ্বস্ত অনুগামী হয়ে ওঠেন। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে হয়ে ওঠেন জওহরলাল নেহ্‌রুর অন্যতম প্রধান সঙ্গী, প্রথমে রেলমন্ত্রী(১৯৫১-১৯৫৬) হিসেবে ও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে। শাস্ত্রীকে নেহেরুর উত্তরসূরী হিসেবে বাছাই করা হয় যখন নেহেরু পুত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হতে নাকচ করে দেন।
শাস্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেহেরুর অপক্ষপাত ও সমাজতন্তের নীতিকেই মেনে চলেছিলেন। ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাক যুদ্ধে  নায়ক ছিলেন ইনিই। তার বিখ্যাত স্লোগান "জয় জওয়ান, জয় কিষান" এই যুদ্ধের সময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। এমনকি এখনও এই স্লোগান মানুষে মনে রেখেছে।  ১৯৬৬ সালের ১০ ই জানুয়ারি তাশখন্দে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে  যুদ্ধ বিরতি চুক্তি সম্পাদিত হয়।  এবং পরের দিন ওখানে শাস্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে সময় মৃত্যুর কারণ হিসেবে ভারত শাস্ত্রী হৃদরোগে মারা গেছে বলে প্রচার করলেও তার পরিবার তা অস্বীকার করে তদন্তের দাবি তোলে। ভারত মনে করে শাস্ত্রীর মৃত্যু তদন্ত যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই হৃদরোগেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সিআইএ (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) অনেকগুলো ইভিডেন্স ও আলামত দেখিয়ে প্রমাণ করে যে, শাস্ত্রীকে যুদ্ধ বিরতি চুক্তির পর পাকিস্তানী গোয়েন্দারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
  4 *নবাবজাদা লিয়াকত আলি খান* জন্মদিন 
                  নবাবজাদা লিয়াকত আলি খান

নবাবজাদা লিয়াকত আলি খান (২ অক্টোবর ১৮৯৬ – ১৬ অক্টোবর ১৯৫১) ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত মুসলিম রাজনীতিবিদ এবং পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে তিনি রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। পাকিস্তানের তিনি মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ্‌র ডানহাত হিসেবে পরিচিত। তিনি কায়েদ-এ-মিল্লাত, শহীদ-এ-মিল্লাত উপাধিতে ভূষিত হন। লিয়াকত আলি খান আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি ব্রিটিশ ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে আসেন। তিনি মুহাম্মদ আলি জিন্নাহকে ভারতে ফিরে আসতে আগ্রহী করে তোলেন ; এরই ফলশ্রুতিতেই এক পর্যায়ে পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হয়। চল্লিশের দশকে লাহোর প্রস্তাব পাশ হবার পরে লিয়াকত আলি খান পাকিস্তান আন্দোলন এগিয়ে নিতে জিন্নাহকে সাহায্য করেন। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশবাসীর পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেন ; বিশেষ ক'রে ভারত পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের বিষয় কাশ্মীর সমস্যাকে তিনি জাতিসংঘে উত্থাপন করেন।
5      *শিশির কুমার ভাদুড়ী জন্মদিন*
                     শিশিরকুমার ভাদুড়ী
অভিনেতা ও নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ীর আজ জন্মদিন। ১৮৮৯ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার রামরাজাতলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবাসী স্কুল থেকে তিনি ১৯০৫ সালে এন্ট্রান্স, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯১০ সালে বিএ এবং ১৯১৩ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। 

পেশাগত জীবনের প্রথমে শিশিরকুমার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট ও বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার প্রবল ঝোঁক ছিল। অধ্যাপনাকালীন শৌখিনতাবশত তিনি অনেক বাংলা ও ইংরেজি নাটকে অভিনয় করেন। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট মঞ্চ ছিল তার অভিনয় স্থান। 

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ নাটকে অসাধারণ অভিনয় করে তিনি প্রশংসিত হন। ১৯২১ সালে পেশাদার অভিনেতারূপে তিনি ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। ১০ ডিসেম্বর আলমগীর নাটকে নাম-ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কিন্তু ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে মতানৈক্য ঘটায় মঞ্চ ছেড়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। শরৎচন্দ্রের ‘আঁধারে আলো’ ও ‘চন্দ্রনাথ’ এর চিত্রায়ণে একই সঙ্গে পরিচালক ও অভিনেতার ভূমিকা পালনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

রঙ্গমঞ্চে শিশিরকুমারের প্রত্যাবর্তন ঘটে ১৯২৩ সালে। এসময় তিনি একটি নাট্যদল গঠন করেন এবং ২৫ ডিসেম্বর ইডেন গার্ডেন্স-ক্যালকাটা একজিবিশনে মঞ্চায়িত দ্বিজেন্দ্রলালের ‘সীতা’ নাটকে রামচন্দ্রের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয়-প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯২৪ সালের ৬ আগস্ট নাট্যমন্দিরে মঞ্চায়িত যোগেশ চৌধুরীর ‘সীতা’ নাটকে শিশিরকুমারের অভিনয়ে অভিভূত হয়ে রসরাজ অমৃতলাল বসু তাকে থিয়েটারের নবযুগের প্রবর্তক বলে ঘোষণা করেন। 

এ নাটকের প্রয়োগ-নৈপুণ্যে তিনি বিলেতি ভাবধারার পরিবর্তে এক নতুনত্বের সূচনা করেন। তিনি কনসার্টের বদলে রোশনচৌকি, আসন-ব্যবস্থায় বাংলা অক্ষর, প্রবেশপথে আলপনা ও পূর্ণকলস, প্রেক্ষাগৃহে চন্দন-অগরু-ধূপের গন্ধ, পাদপ্রদীপের পরিবর্তে আলোক-সম্পাত এবং সীনের পরিবর্তে বক্স্ সেট প্রয়োগ করেন। শিশিরকুমার কর্নওয়ালিস থিয়েটার (বর্তমান শ্রী সিনেমা) মঞ্চেও কাজ করেছেন।

নাট্যমঞ্চে একাধিক নাটকে অভিনয় করে শিশিরকুমার যশস্বী হন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলি হলো, রঘুপতি ও জয়সিংহ (বিসর্জন, ১৯২৬), যোগেশ (প্রফুল্ল, ১৯২৭), জীবানন্দ (ষোড়শী, ১৯২৭), নাদির শাহ (দিগ্বিজয়ী, ১৯২৮), নিমচাঁদ (সধবার একাদশী, ১৯২৮) এবং চন্দ্রবাবু (চিরকুমার সভা, ১৯২৯)। ১৯৩০ সালে তিনি তপতী নাটকে বিশেষ অভিনয় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেন। আর্থিক অনটনের দরুণ এ বছরই তিনি স্বীয় মঞ্চ নাট্যমন্দির ছেড়ে স্টার থিয়েটারে যোগ দেন। তিনি অনেক সবাক ও নির্বাক চলচ্চিত্রে সফল অভিনয় করেন।

১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শিশিরকুমার নিজস্ব  নাট্যগোষ্ঠী নিয়ে আমেরিকা যান। পরের বছর ১২ জানুয়ারি তিনি নিউইয়র্কের ভ্যান্ডারবিল্ট থিয়েটারে সীতা মঞ্চায়নের মাধ্যমে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ১৯৪২ সালে ‘শ্রীরঙ্গম’ নামে একটি রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বিশ্বরূপা থিয়েটার নামে পরিচিত। শ্রীরঙ্গমে মঞ্চস্থ বিভিন্ন নাটকের মধ্যে মাইকেল নাটকের নাম-ভূমিকায় তার অভিনয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

এখানে তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা হলো, বিপ্রদাস, তখৎ-এ-তাউস, বিন্দুর ছেলে  ও দুঃখীর ইমান। শ্রীরঙ্গমেই তিনি সর্বশেষ অভিনয় করেন। শিশিরকুমার বাংলা রঙ্গমঞ্চের এক কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব। নাট্যমঞ্চে তিনি ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। 

তার অভিনয় বহু শিক্ষিত যুবককে পেশাদার নাট্যাভিনয়ে যোগদানে উৎসাহ জুগিয়েছে। তার অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন; বরং তার আকাঙ্ক্ষা ছিল, একটি জাতীয় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠা করা এবং এতেই তিনি খুশি হতেন। এ সালে ৩০ জুন বরাহনগরস্থ নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।